পহেলা বৈশাখের কবিতা ২০২৩ | বাংলা নববর্ষের কবিতা
পহেলা বৈশাখের কবিতা ২০২৩- আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকবৃন্দ, কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব পহেলা বৈশাখের কবিতা ২০২৩ নিয়ে। আশাকরি, সবাই মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তো চলুন শুরু করা যাক।
পহেলা বৈশাখের কবিতা ২০২৩
প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়ে থাকে। পহেলা বৈশাখ নিয়ে অনেকেই কবিতা জানতে চায়। নিচে বাছাই করা কিছু পহেলা বৈশাখের গায়েও শেয়ার করা হলো।
✅কবিতাঃ তোরা সব জয়ধ্বনি কর
কবিঃ কাজী নজরুল ইসলাম
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
আস্ল এবার অনাগত প্রলয়–নেশায় নৃত্য–পাগল,
সিন্ধু–পারের সিংহ–দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
মৃত্যু–গহন অন্ধকুপে, মহাকালের চন্ড–রূপে ধূম্র–ধূপে
বজ্র–শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!
ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
দ্বাদশ রবির বহ্নি–জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন–কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়
বিন্দু তাহার নয়ন –জলে সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে কপোল–তলে!
বিশ্ব –মায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর ‘পর –
হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ংকর!”
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায়–মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ–লুকানো ঐ বিনাশে
এবার মহা–নিশার শেষে
আসবে ঊষা অরুণ হেসে
করুণ্ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু–চাঁদের কর!
আলো তার ভরবে এবার ঘর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
✅কবিতাঃ নতুন বছরে
কবিঃ রেদোয়ান মাসুদ
নতুন বছরে হৃদয়ে নামুক বৃষ্টির জোয়ার
পূর্ণ চাঁদের আলোয় হোক ভালোবাসার সওয়ার
মুছে যাক হৃদয়ে জমে থাকা সকল আধার
শিহরণে উঠুক কেঁপে হৃদয় আবার।
এসেছে বৈশাখ
এসেছে বৈশাখ তোমাদের দ্বারে
দিও না ফিরিয়ে খালি হাতে তারে
ভুলে যেও যত যাতনা দিয়েছি তোমারে
পাঠালাম শুভেচ্ছা অঞ্জলি পেতে
রেখে দিও স্মরণে হৃদয়ের তরে।
আরও পড়ুনঃ পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস, এসএমএমএস ও কবিতা
✅কবিতাঃ এসো হে বৈশাখ এসো এসো
কবিঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক॥
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক॥
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক॥
✅কবিতাঃ বৈশাখ কবিতা
কবিঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ,
ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল
তপঃক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক-
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ?।
ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে!
কী ভীষ্ম অদৃশ্য নৃত্যে মাতি উঠে মধ্যাহ্ন-আকাশে
নিঃশব্দ প্রখর-
ছায়ামূর্তি তব অনুচর।।
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ,
রহি রহি দহি দহি উগ্রবেগে উঠিছে ঘুরিয়া,
আবর্তিয়া তৃণপর্ণ, ঘূর্ণচ্ছন্দে শূন্যে আলোড়িয়া
চূর্ণ রেণুরাশ-
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ।।
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী,
পদ্মাসনে ব’স আসি রক্তনেত্র তুলিয়া ললাটে,
শুষ্কজল নদীতীরে শস্যশূন্য তৃষাদীর্ণ মাঠে
উদাসী প্রবাসী-
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী।।
জ্বলিতেছে সম্মুখে তোমার
লোলুপ চিতাগ্নিশিখা, লেহি লেহি বিরাট অম্বর,
নিখিলের পরিত্যক্ত মৃতস্তূপ বিগত বত্সর
করি ভস্মসার-
চিতা জ্বলে সম্মুখে তোমার।।
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ।
উদার উদাস কণ্ঠ যাক ছুটে দক্ষিণে ও বামে,
যাক নদী পার হয়ে, যাক চলি গ্রাম হতে গ্রামে,
পূর্ণ করি মাঠ-
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ।।
সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব-‘পরে,
ক্লান্ত কপোতের কণ্ঠে, ক্ষীণ জাহ্নবীর শ্রান্তস্বরে,
অশ্বত্থছায়াতে-
সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে।।
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার-ফুত্কার-লুব্ধ ধুলা-সম উড়ুক গগনে,
ভ’রে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধ-সনে
আকুল আকাশ-
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ।।
তোমার গেরুয়া বস্ত্রাঞ্চল
দাও পাতি নভস্তলে, বিশাল বৈরাগ্যে আবরিয়া
জরা-মৃত্যু ক্ষুধা-তৃষ্ণা লক্ষকোটি নরনারী-হিয়া
চিন্তায় বিকল-
দাও পাতি গেরুয়া অঞ্চল।।
ছাড়ো ডাক হে রুদ্র বৈশাখ!
ভাঙিয়া মধ্যাহ্নতন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরিব দ্বারে,
চেয়ে রব প্রাণীশূন্য দগ্ধতৃণ দিগন্তের পারে
নিস্তব্ধ নির্বাক্-
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ।।
✅কবিতাঃ রঙ্গিন বৈশাখ
লাল পেড়ে সাদা শাড়ি বৈশাখেতে পড়ো
হাতটি ধরে নাগরদোলায় ভিতু হয়ে চড়ো।
হাতে রেখো রেশমী চুড়ি, পায়ে দিও মল
নৌকা-ভ্রমনে যাবো যখন, ছুয়ে দেখো জল।
কাজল কালো করো তোমার মায়াবি দুটো চোখ,
আলতো করে দিবো ছুয়ে ঐ রাঙা ঠোঁট।
এলোকেশে এসো প্রিয়, কপালে দিও টিপ
বটতলাতে থেকো তুমি, খুজে নিবো ঠিক।
চাতক হয়ে থাকবো চেয়ে তোমার পথের পানে
বড্ড বেশি ভালোবাসি, তোমার মন তা জানে।
পান্তা-ইলিশ মণ্ডা-মিঠাই আয়েশ করে খেয়ো
মাটির বাসন, রঙ্গিন সিকে ইচ্ছে মতো নিয়ো।
শুরুর দিনের মতোই ভালো কাটবে বছর দেখো
মনের কোনে আমার জন্যে একটু জায়গা রেখো।
আসতে দিও কালবৈশাখী, চিন্তা নিও না
বিপদ যতই আসুক- তোমায় ছুতে দিবো না।
✅কবিতাঃ উৎসব
চারিদিকে রব উঠে, বৈশাখ এসে গেছে
সাজ সাজ চারিদিকে- পড়ে না কেউ পাছে।
গান সাথে কবিতা- মুখরিত চারিদিক
কোথা দিয়ে দিন যায়; ঘড়িবাবুর টিকটিক।
ভোর হতে শোভাযাত্রা ঠাই পাওয়া দায়
নাচ-গান-আবৃত্তি কি নেই মেলায়!
শাড়ি-পাঞ্জাবিতে ছেলেবুড়ো চলে
বৃক্ষ শাখ ভরে ফুলে ফলে।
মাটির বাসনে করে পান্তা-ইলিশ
রাজপথে আল্পনা – নতুনের পালিশ।
শীত গেছে তাতে কি, উৎসবে পিঠাপুলি
হাঁটি হাঁটি পা পা করে নতুনের খোঁজে চলি।
দোকানে দোকানে চলে হালখাতা উৎসব
মণ্ডা-মিঠাই খাবো আর সব দিয়ে বাদ।
সকাল গড়িয়ে সাঁঝ এসে যায়
তবু যেন উৎসবের শেষ না হয়।
✅কবিতাঃ বর্ষবরণ
বৈশাখ মানে বাঙালীয়ানা, অন্য রকম সাজ
ছুটোছুটি, হুড়োহুড়ি সবার অনেক কাজ।
গ্রামবাংলার চৈতালি কিংবা পাহাড়ের বৈসবি
মহাজনের হালখাতাটাও বর্ষবরন উৎসবই।
কাচা-লঙ্কা, বেগুনভাজা, পান্তা-ইলিশ হবে
শেষ পাতেতে মণ্ডা-মিঠাই পেট পুরে সব খাবে।
রাতজেগে সব আল্পনা দেয়, ভোরের শোভা যাত্রা
পিঠাপুলি নাগরদোলা এসব নিয়েই মেলা।
ধুতি আর পাঞ্জাবিতে ছেলের দল সাজে
গানের আসরে ঢোল তবলা হারমনিয়াম বাজে,
লাল-সাদায় বঙ্গ নারীর কি অপরূপ বেশ
ঢাক-ঢোলের জামা গায়ে বাচ্চাদের হাসির রেশ।
পশু-পাখী- হরেক সাজে শোভাযাত্রা যায়
বছরটাকে এভাবে যেন করবে মঙ্গলময়।
নৃত্য-গীতের আসর তাতে হুল্লোড়ের নেই শেষ
বেলাশেষেও কাটতে চায়না উৎসবেরই রেশ।
✅কবিতাঃ এসেছে বৈশাখ
দামাল হওয়া জানান দেয় বৈশাখ যে দ্বারে
পেছন ফিরে চেয়ে দেখি বসন্ত যায় চলে
আমের শাখে গুটি দেখি, কাঠাল বাগে ইঁচড়;
দামাল হাওয়ার জানান দেয় পাপিয়া, চাতক খেচর।
চৈত্র্যের সেই কাঠফাটা রোদ, চৌ-চির মাঠ-ঘাট
চৈতালী শেষে বৈশাখেতেও বসে মেলা-হাট।
হিমচাপা আর কৃষ্ণচূড়ায় নন্দিত দৃষ্টি,
জারুল পানে শ্রান্তি আসে, প্রতিক্ষাতে বৃষ্টি।
বৃক্ষতলে শ্রান্তি মেলে রাখাল বাজায় বাশি-
বাউলেরা গান ধরে যে, তপ্ত রোদেও হাসি।
নদীর বুকের জল যে কমে- শুষ্ক হাওড়-বাওড়
কখন যেন ঝড় উঠে তাই যায়না করা ঠাওর।
নবরূপে নবসাজে নতুন বছর আসে
চোখের তারায় জমা হয়ে পুরোনো স্মৃতি ভাসে।
প্রাক্তন কে ফিকে করে নব দিনে পা
বৈশাখ যে এসে গেছে বরন করে যা।
✅কবিতাঃ পহেলা বৈশাখ (গীতি কবিতা)
কবিঃ আবু জাফর বিঃ
আবার এসেছে ফিরে বাঙালির ঘরে,
নতুন পহেলা বৈশাখ।
আজ শুধুই ভালোবাসার উজানে,
বাঙালির বর্ষবরণ নানা আয়োজনে;
রমণীরা আজ সেজেছে নতুন সাজে,
পায়ের নূপুর ঘুঙ্গুর বাজে।
নাচে হেলেদুলে গায়ছে প্রাণখুলে,
দেখে সবার চোখ জুড়িয়ে যাক।
ঐ
লালপেড়ে শাড়ি কানে দিয়ে দুল,
চোখে কাজল খোপায় গাঁদা ফুল।
কামার, কুমোর, জেলে, তাতি,
হিন্দু, মুসলিম, বোদ্ধ, জাতি।
আনন্দ উল্লাসে বৈশাখী মেলায় এসে;
সব ভেদাভেদ ভুলে যাক।
ঐ
বটের ছায়ায় রাখালের বাঁশি,
ফসলের মাঠে কৃষাণের হাসি।
পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধ,
পাখির কলকাকলি সুরের ছন্দ।
বাতাসে ছড়াল সুগন্ধ মনে আনন্দ,
কৃষ্ণচূড়ার রং হৃদয়ে ছড়াক।
ঐ
রমনার বটমূলে সকল শিল্পী মিলে
গান-নৃত্য করে সারাদিন ধরে,
পান্তা-ইলিশ খেয়ে বৈশাখী মেলায় গিয়ে;
বাঙালির ঐতিহ্যকে লালন করে।
গ্রাম-অঞ্চলে বিভেদ ভুলে,
সবাই একসাথে মিলে-মিশে থাক।
ঐ
মাঠে সোনার ধান, জুড়াই প্রাণ
কৃষকের মুখে বৈশাখী গান,
মনে আজ আনন্দ ভুলে সব মন্দ,
নেইতো কারো মান-অভিমান।
দুপুরের খরাই বটের ছায়ায়,
সব জরা-ক্লান্তি ধুয়ে-মুছে যাক।
আবার এসেছে ফিরে, বাঙালির ঘরে,
নতুন পহেলা বৈশাখ।
✅কবিতাঃ আসছে নববর্ষ
সাল পহেলা আসছে আবার
নববর্ষের হালখাতা
বর্ষবরণ উৎসবে তাই
মেতে উঠবে জনতা।
গাঁয়ের মাঠে বসবে আবার
বৈশাখের ঐ মেলা
ছোট্র খোকা দোলনায় চড়ে
খেলবে মজার খেলা।
খোকা-খুকি ছন্দ পায়ে
নাচবে তা ধিন’তা
খুশির স্রোতে ভেসে যাবে
দূর অতীতের চিন্তা।
বটের নিচে জমবে আবার
পান্তা খাওয়ার ধুম
বর্গাচাষি করিম চাচার
হারিয়ে গেছে ঘুম !!
✅কবিতাঃ বৈশাখ এলে
বৈশাখ এলে দালানবাসির
মনে যত সুখ-রে,
ঘরে নড়েবড় মানুষগুলোর
মনে তত দুখ-রে।
গায়ের মানুষের ভয়ে কাঁপে
এক্ষুণি যে নামবে ঝড়,
পুরান কালের গাছটা পড়ে
শব্দ করে কড়মড়।
ক্ষেতের ফসল লন্ড-ভন্ড
ঘূর্ণিঝড়ের কুস্তিতে,
শূন্য ভিটায় নিঃস্বজনের
ঘুম আসে না সুস্তিতে।
✅কবিতাঃ কে কে যাবে
কে কে যাবে বৈশাখী মেলায়
জমবে মেলা পথে পথে
সাজবে রঙিন সাজে
মনের মাঝে তাকদুম তাকদুম
বৈশাখী সুর বাজে।
লাল সাদা শাড়িতে সাজব
পহেলা বৈশাখে
লাল সাদা ফুল মালা খোঁপায়
নথ ঝুলাবো নাকে।
হেলে দুলে গানের মাঝে
হারাবো এ বেলায়
নাগরদোলায় চড়ব আমি
বৈশাখী বটমেলায়।
পাতায় বাঁশি হাতে নিয়ে
সুর ছন্দে বাজাবো
হরেক রকম আনন্দে মন
আঙ্গিনা সাজাবো।
ফুলের মুকুট মাথায় নিবো
ঠোঁটে লালের ছোঁয়া
মন্ডা মিঠাই সন্দেশ মিষ্টি
কিনব মুড়ির মোয়া।
বৈশাখী মেলায় কে যাবে
তোমরা এবার বলো ?
দলে দলে বন্ধু সবাই
প্রাণের মেলায় চলো।